দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা --- মুশফিক বরাত
June 22, 2021 at 2:02 pm,
No comments
১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই ছয় বছরকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হয়। এটি হলো মানব ইতিহাসের সংঘটিত সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। মিত্রশক্তিতে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও চীন। অক্ষশক্তিতে ছিল জার্মানি, ইতালি, জাপান ও হাঙ্গেরি। কলোনীর লোভ থেকে জন্ম নেয় সাম্রাজ্যবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের ফলে আসে যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো এমনই যা কলোনী বা উপনিবেশ নিয়ে যুদ্ধ। কোনো স্বল্পোন্নত অ-ক্যাপিটালিস্ট দেশ যখন কোনো ক্যাপিটালিস্ট দেশের হাতে চলে যায় তখন ওই অধিকৃত স্বল্পোন্নত অ-ক্যাপিটালিস্ট দেশকেই বলা হয় কলোনী।
১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে সমগ্র বিশ্বের ভাগ্য নির্ধারণ করতে একত্রিত হয়েছিলেন তিনজন মানুষ তারা হলেন রুজভেল্ট, স্ট্যালিন ও চার্চিল। তাদেরকে বলা হয় বিগ থ্রি। মিত্রশক্তি যখন জয়ের সুগন্ধ পাচ্ছে তখন এই বিগ থ্রি কৃষ্ণসাগরের তীরে সোভিয়েত রিসোর্ট ইয়াল্টায় বৈঠকে বসতে সম্মত হন।
ইয়াল্টা চুক্তি সত্ত্বেও পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যেই স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছিল। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তীতে বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা দিয়েছিল। পরাজয় সত্ত্বেও হিটলার আত্মসমর্পণ করতে চাননি। তিনি গোপন অস্ত্রের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যা যুদ্ধকে ঘুরিয়ে দেবে। সোভিয়েতরা প্রথমে উপস্থিত হয়েছিল, কিন্তু ইতিমধ্যেই হিটলার আত্মহত্যা করেছিলেন। সরকারি তত্ত্বটি ছিল হিটলার তার সঙ্গী ইভা ব্রানকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। এই যুদ্ধ অ্যাডলফ হিটলার ও তার গুটিকয়েক সমর্থক যুদ্ধপ্রেমীদের কাজ ছিল না- এর আড়ালে ছিল হিটলারের বিশাল ফ্যাসিবাদী সমর্থকগোষ্ঠী। জাপানের হিরোশিমা শহরের উপর লিটল বয় নামের পরমাণু বোমা বিস্ফোরিত হয় ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। এতে ঠিক তিন দিন পর নাগাসাকি শহরের উপর ফ্যাটম্যান নামে আরেকটি পরমাণু বোমা বিস্ফোরিত হয়। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যথাক্রমে প্রাণ হারান ১৪০,০০০ ও ৭৪,০০০ মানুষ।
নাৎসি দল ১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় বসেছিল এক-তৃতীয়াংশ জার্মানের ভোটের রায়ে। সম্প্রতি জার্মানির দ্য জাইট পত্রিকায় একটি অনলাইন জরিপে দেখা গিয়েছে, ৫৩ শতাংশ জার্মান এখনো মনে করেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মান জাতিকে ঢালাওভাবে দায়ী করা সঠিক নয়। বরং এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল কিছু অপরাধী প্রকৃতির মানুষের দ্বারা। এককথায় বলা যায়, হিটলারকে এখনো জার্মানির জনগণ ঘৃণার চোখে দেখেন। ছয় বছরব্যাপী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৮ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল।
কিন্তু এই কলোনী নিয়ে যুদ্ধ অনেকদিন চললো। পরিণতি এমনই ভয়াবহ হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ও তার মিত্রদের পরাজয় ঘটে। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও তিন দশক জঙ্গলে লুকিয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি তাও গ্রেফতার এড়াতে। তার নাম হিরো ওনোদা। দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক তিনি। মরে যাবেন তবু মাথা নত করবেন না- দেশের জন্য যুদ্ধে যাবার আগে এ পণই করেছিলেন। আমার মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল সাম্রাজ্যবাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে- কলোনী আবিষ্কারের নেশায়। অতি সম্প্রতি এই বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের ভূমিকা নিয়ে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন দেশটির সম্রাট নারুহিতো। যুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ৭৫ বছর পূর্তিতে এ মত প্রকাশ করেন জানিয়েছে বিবিসি। কিথ লো-র স্যাভেজ কন্টিনেন্ট বইয়ে বর্ণনায় আমরা পাই বেশ কিছু বক্তব্য। লো বলেন, কী অপূর্ব জয় সেদিন, কী অসম্ভব মুক্তি। কিন্তু শুনতে পাই না যুদ্ধকালীন ভয়ংকরতার বিবরণ। ইচ্ছায় না হোক অনিচ্ছায়, কেউ আর মনে করাতে চায় না, কী কান্ডই ঘটছিল সেদিনকার ইউরোপীয় মেনল্যান্ডে, প্রথমে নাৎসি-নির্যাতিত ও পরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপের নগর-শহর-শহরতলি-গ্রামে। কেমন ছারখার হয়ে গিয়েছিল ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, চেক, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, দেশের পর দেশ।