কিউবিস্ট আন্দোলনের পাবলো পিকাসো --- মুশফিক বরাত
July 10, 2021 at 12:11 pm,
No comments
তিনি একজন স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী, মৃৎশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মঞ্চ নকশাকারী, কবি এবং নাট্যকার। তিনি গঠনকৃত ভাস্কর্যের উদ্ভাবক, কোলাজের সহ-উদ্ভাবক ও কিউবিস্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। তার সবচেয়ে বিখ্যাত ও মূল্যবান ছবি ‘গুয়ের্নিকা’। যা ১৯৩৭ সালে আঁকা হয়েছিল। পাবলোর সেরা ৫টি চিত্রকর্ম হলো- থ্রি মিউজিশিয়ানস, দ্য ওল্ড গিটারিস্ট, দ্য উইপিং ওম্যান, লেস ডেমোঁয়সেলেস ডি’এভিগনন ও গুয়ের্নিকা।
গুয়ের্নিকা নামটি এসেছে স্পেনের একটি শহরের নাম থেকে। স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় ১৯৩৭ সালের ২৬শে এপ্রিল জার্মান নাজি এবং ফ্যাসিস্ট ইটালিয়ানরা স্প্যানিশ জাতীয়তাবাদীদের অনুরোধে এখানে বোমাবর্ষণ করে। এই বোমাবর্ষণের প্রতিবাদে পিকাসো মাস্টারপিসটি তৈরি করেন। ফলে বিশ্ববাসীর নজরে আসে গৃহযুদ্ধ আর তাই গুয়ের্নিকাকে পৃথিবীর অন্যতম অ্যান্টি-ওয়ার চিত্রকর্ম বলা হয়।
আরো কিছু বিখ্যাত চিত্রকর্ম হলো- দ্য ড্রিম, মাই প্রিটি গার্ল, টু নুডস, থ্রি ড্যান্সার্স, গার্ল বিফোর এ মিরর, গ্যারসন আ ল্যা পাইপ, লাইফ ইত্যাদি। পিকাসো শুধুমাত্র একজন ছবি-আঁকিয়ে ছিলেন না, একজন ভাস্কর হিশেবেও তাকে আমরা চিনি। সেরামিক আর্টিস্ট ও ম্যুরালিস্ট হিশেবেও তার নাম এসেছে। তার ড্রইংয়ের জোর ছিল অসম্ভব। সঙ্গে নিখুঁত অবজার্ভেশন। বলা যায়, এটা তার সহজাত ক্ষমতা।
রিয়ালিজমের মূল জায়গাটাকে ছোট্ট বেলার আয়ত্ব করেন আর পরিণত বয়সে এসে ব্যবহার করেন। তার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নানাভাবে ছবিকে ভাঙার কাজ। বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসোকে একবার জিগ্গেস করা হয়েছিল, ‘আপনার আঁকা ছবিগুলোর মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ছবি কোনটি?’ এই প্রশ্নের উত্তরে পিকাসো বলেছিলেন, “প্রতিটি ছবি আঁকার সময়ই মনে হয়েছিল এর পরে যে ছবিটি আঁকবো সেটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় ছবি।’’
১৯০১ সালে বার্সেলোনা আসার পর তার চিত্রধারায় একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। আগে তিনি উজ্জ্বল, স্পষ্ট ও গাঢ় রং ব্যবহার করতেন। সেসব রং পরিহার করে আরম্ভ করলেন অনুজ্জ্বল নীল রঙের ব্যবহার। এটা তার জীবনের বিশেষ অধ্যায় বলে পরিচিত। পিকাসো ছিলেন কমিউনিস্ট ভাবাদর্শী। এ সময় রঙিন উজ্জ্বল পোশাক পরা রোমান্টিকতার ছবি থেকে বেরিয়ে এসে আঁকতে শুরু করলেন সমাজের দুঃখী মানুষদের বেদনা ও বিষণ্নতার ছবি। বাস্তববাদী রেখার ঢঙ ভেঙে নতুন রেখাভঙ্গি বেছে নিলেন।
প্যারিসের স্থায়ী জীবনে পিকাসোর ক্যানভাসে নতুন মোড় এসে উপস্থিত হয়। ১৯০৫ সালে শিল্পীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে ফার্নান্দো অলিভিয়ের। শিল্পীর জীবনে প্রেম ও আনন্দের ঢেউ জাগে। এ সময় বিশ্ববিখ্যাত কবি গিয়োম এপোলোনিয়ের সঙ্গেও পরিচয় ঘটে। তার জীবন থেকে বিষণ্নতার নীল যন্ত্রণা কেটে যেতে থাকে। তার ক্যানভাসে স্থান করে নেয় গোলাপি রং। এই হলো তার পিংক পিরিয়ড। এ সময় তিনি ফার্নান্দোকে মডেল করে অনেক ছবি আঁকেন।
কখনো কখনো পিকাসোর ক্যানভাসে প্রকট হয়ে উঠে যৌনতা। নারীদের আদিম উপস্থাপন দেখা যায় তার অসংখ্য ছবিতে। নতুন পথে হাঁটাই সৃজনশীল মানুষের মৌলিকত্বের বিজ্ঞাপন। তার ছবিতে সৃজনশীলতা ছিল বলেই তিনি পিকাসো। এক অমর চিত্রশিল্পী যা এখনো লাখো তরুণ-তরুণীর হৃদয়ে স্থান করে আছে। তাকে এখনো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
ছবি :
গুয়ের্নিকা