বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্তমান কার্যকরী পদক্ষেপ --- মুশফিক বরাত
August 11, 2021 at 12:31 pm,
No comments
উৎস যাতে নিঃশেষ না হয়ে যায় সেই দিক থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির সাথে নবায়নযোগ্য শক্তির মূল পার্থক্য। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, খনিজ তেল এগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি। অন্যদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি হচ্ছে বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ, সৌরশক্তি, বায়োমাস, বায়োফুয়েল, জিওথার্মাল, নদীর স্রোত, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদি। আর এসব কারণে বেনজিন রিং সোসাইটি আবর্জনা-প্লাস্টিক থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎকেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিশেবে চিহ্নিত করেছে।
আরো বিস্তারিত বললে জোয়ার-ভাটা, জৈবশক্তি (জৈবভর), হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইত্যাদি নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস। প্রচলিত মত, হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ করা বেশ কঠিন। কিন্তু আমাদের সোসাইটির সিদ্ধান্ত হলো হাইড্রোজেন ফুয়েল একটি অনন্ত সমীকরণ। মহাকাশ ভ্রমণের সর্বাধিক উন্নত সমাজে হাইড্রোজেন হয়ে উঠবে সহজপ্রাপ্য। যেমন সূর্য হাইড্রোজেন ফুয়েলের উৎস। মহাবিশ্বের মূল গাঠনিক উপাদান হলো গ্যালাক্সি। গ্যালাক্সির ভেতরে রয়েছে সৌরজগত। সৌরজগত একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। সেটি সূর্য। সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন। আসলে মোট ভরের তিন-চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। মহাবিশ্বে সূর্যের মতো এমন বিলিয়ন-বিলিয়ন নক্ষত্র আছে। C6H6-ও একটি ম্যাজিক স্ট্রাকচার। কার্বন-৬ যেমন ষষ্ঠ সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করে তেমনি হাইড্রোজেন-৬ হাইড্রোজেন ফুয়েল নিশ্চিত করে। এভাবে অনন্ত মহাবিশ্ব জয় করতে করতে পাড়ি দেওয়া যায়।
আমাদের বেনজিন রিং সোসাইটি দিনাজপুরের প্রাথমিক (Primary) সমীকরণ হলো, নিজ নিজ দেশের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা মহাকাশ গবেষণা সংস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যেমন- বাংলাদেশের ক্ষেত্রে SPARRSO, ভারতের ক্ষেত্রে ISRO তেমনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে NASA (National Aeronautics and Space Administration). বেনজিন সোসাইটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি প্রগতিশীল (Progressive) সংগঠন। আমাদের সোসাইটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুধুমাত্র সাম্রাজ্যবাদবিরোধী কর্মকান্ডের সমালোচনা করে কিন্তু নাসাকে সমর্থন জানায়। তাছাড়া আমরা বিশ্বব্যাপী সমস্ত বহুজাতিক কোম্পানির বিরুদ্ধে।
মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) প্রযুক্তিভিত্তিক গবেষণা ও প্রয়োগ সংস্থা। তাদের ম্যান্ডেট হচ্ছে- পানি সম্পদ, ভূতত্ত্ব, কৃষি, বন, সমুদ্রবিজ্ঞান, শিক্ষা, আবহাওয়া ইত্যাদিতে বিজ্ঞানের ব্যবহার নিশ্চিত করা। তাদের ভিশন হচ্ছে- ‘মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন এবং শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা।’
প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ জ্ঞানের সন্ধানী; মানুষ জ্ঞান আহরণের প্রচেষ্টা চালিয়েছে প্রস্তর যুগে, ব্রোঞ্জযুগে এমনকি লৌহযুগেও। বর্তমানেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এই প্রচেষ্টার কারণে মানুষ সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে যাবে আরো বহুদূর। মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার তাই সীমিত নয়। বিজ্ঞান হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার; মুক্তবুদ্ধির চর্চা হোক- জ্ঞান হোক মুক্ত বিহঙ্গ।
মহাকাশে সামুদ্রিক প্রাণী স্কুইড পাঠিয়েছে নাসা (NASA). বিজ্ঞানীদের মত, মহাকাশে মানুষের যাওয়া-আসার ব্যাপারে এই গবেষণা সাহায্য করবে। এতে মানবদেহে মহাকাশের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
মানবদেহে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও পরিপাকতন্ত্র পৃথিবীর মতো মহাকাশে ঠিক একইভাবে কাজ করেনা। চাপ ও মাধ্যাকর্ষণের বড় ধরণের প্রভাবের কারণে এমনটা ঘটে। এখন প্রশ্ন হলো, পৃথিবীতে লাখ লাখ প্রজাতির প্রাণী আছে। এসবের মধ্যে সামুদ্রিক প্রাণী বেবি স্কুইড ও আণুবীক্ষণিক প্রাণী টারডিগ্রেডকে কেন বেছে নেওয়া হলো। বিজ্ঞানীদের মতামত, স্কুইডের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ও মানুষের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার মধ্যে যথেষ্ঠ মিল রয়েছে।
আরেকটি বিষয় জানা দারকার। গ্রহাণু বা অ্যাস্টরয়েড যদি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তবে কী ঘটতে পারে? বাংলাদেশের সমান একটি গ্রহাণুর ধাক্কায় বা বিস্ফোরণে পুরো এশিয়া মহাদেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে! এমতাবস্থায় পারমাণবিক বোমার যুগোপযোগী ব্যবহার জরুরী। এ্যাটম বোমা বা পারমাণবিক বোমার ব্যবহার হতে হবে মানুষের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে- জীবন হরণের জন্য নয়। অতি অবশ্যই পারমাণবিক বোমার প্রয়োজন আছে। তবে তা শুধুমাত্র অ্যাস্টরয়েড বা উল্কাপিন্ড ধ্বংসের জন্য। মানব প্রজাতির ধ্বংসের জন্য যা করাটা উচিত হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে করেছিল।
আরেকটি দুঃসংবাদ হলো, পৃথিবীতে যেকোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে সৌরঝড় যাতে টিভি, মোবাইল, জিপিএস ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, মহাজাগতিক জগতে সেরা সুন্দরী কে? নেটদুনিয়ার মত, হাবলের চোখে যে ‘প্রজাপতি নীহারিকা’ সেটাই। এখন সুসংবাদে আসি, লাল গ্রহ মঙ্গলে বিশাল বিশাল হ্রদ যে রয়েছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছে নাসা। মঙ্গলের দক্ষিণ মেরুতে বিশাল অংশ জুড়ে যার অবস্থান। এগুলো জল বা পানি হবার সম্ভাবনাই বেশি।
গ্রহের তাপমাত্রা এত কম যে হ্রদগুলির জল জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলে যে পারসিভারেন্স রোভার ঘুরছে তাতে বেনজিন রিং সোসাইটির সভাপতি হিশেবে আমারও নাম আছে। ক্যাম্পেইনে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের নাম একেকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সিলিকন চিপসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন জানিয়েছেন যে, ২০২৩ সালের দিকে শুক্রযান মিশন লঞ্চ করবে তারা। ফসফিন গ্যাসের উপস্থিতি দেখে শুক্রগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের ঘোষণা দিয়েছেন। ফসফিন হলো ফসফরাস ও হাইড্রোজেন মিলে গঠিত একটি রাসায়নিক যৌগ। এই গ্যাসটি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়। ফসফরাসের সঙ্গে হাইড্রোজেনের মিলন ঘটিয়ে পৃথিবীর কিছু ব্যাকটেরিয়া এই গ্যাস তৈরি করে। ফলে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, ইসরো ও স্পারসোর গুরুত্ব বেশ ভালোই বোঝা যাচ্ছে।
এখন প্যারিস জলবায়ু সম্মেলন সম্বন্ধে আলোচনায় আসা যাক। এটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত একটি বৈশ্বিক চুক্তি যা ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিদের ঐকমতের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। ৫৫টি দেশ একত্র হবার পর এই চুক্তিটি কার্যকর হয়। যারা বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের কমপক্ষে ৫৫ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসে কপ২১ নামের এক সম্মেলনে জলবায়ু চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হন বিশ্বনেতারা। এই চুক্তির অধীনে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যাতে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধির হার দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার অঙ্গীকার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার হুমকি দিয়েছিলেন। তার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছিল ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর।
ক্ষমতায় আসার পর প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে ফেরে যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রতীয়মান হয় তাদের মুনাফাকেন্দ্রিক ক্ষমতালিপ্সু চরিত্র আর পুঁজিবাদের চিরকালীন দূর্বলতার অপরিকল্পিত নগরায়ন। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন লক্ষ্যটিকে ‘শূন্য কার্বন, শূন্য দারিদ্র্য’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৫ সালে অংশগ্রহণকারী ১৯৬টি দেশ তাদের কার্বন নিঃসরণকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হ্রাস করবে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর প্রাণহানি বাড়ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ। সেটা ২০১৮ সালে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। যাতে ৫৭তম দেশ হিশেবে বাংলাদেশের নাম তালিকায় যুক্ত হয়। যা আশার সংবাদ- আশার দিক। একারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাকে এ সাফল্যের জন্য সাধুবাদ জানাতে চাই। টিভি চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া করে থাকে। স্যাটেলাইটের কারণে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। এর মাধ্যমে ডিটিএইচ বা ডিরেক্ট টু হোম ডিশ সার্ভিস চালু সম্ভব। যার মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও অত্যাধুনিক ব্যাংকিং সেবা দেওয়া যায়। এমনকি ইন্টারনেট সুবিধাও দেওয়া সম্ভব। স্যাটেলাইট হলো কৃত্রিম উপগ্রহ যেটা প্রকৃতির সৃষ্টি নয় সত্যিকার অর্থেই মানবসৃষ্ট। যেগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরে। পৃথিবী কমলালেবুর মতো প্রায় গোলাকৃতির। কাজের ভিত্তিতে তিন ধরণের স্যাটেলাইট আছে। যথা- LEO (Low Earth Orbit), MEO (Medium Earth Orbit) এবং GEO (Geostationary Earth Orbit); এই তিনটি।
নিচে বেনজিন রিং সোসাইটির কার্যকরী ৫ দফা দাবিনামা দেওয়া হলো।
বেনজিন রিং সোসাইটির ৫ দফা কার্যকরী দাবিনামা :
*নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা শক্তির ব্যবহার ও এর উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
*বেনজিন রিং সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জোর দেওয়া ও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি- নব্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি তৈরি করা। সেইসাথে প্রকৃতি-পরিবেশ-বনাঞ্চলে বেনজিন জৈব যৌগ সনাক্ত করার পদ্ধতি আবিষ্কার।
*মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজ নিজ দেশের সর্বাধিক অগ্রগামী বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনকে প্রাধান্য দেওয়া।
*জলবায়ু পরিবর্তন-হ্রাস সম্পর্কিত প্যারিস চুক্তিটি যথাসম্ভব বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে নৃতাত্ত্বিকভাবে একেবারে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন। এজন্যে প্যারিস সম্মেলনকে সফল করার কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ।
*দেশে দেশে চিহ্নিত বিজ্ঞান সংগঠনকে সরকারি অর্থায়নে নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রেরণের উদ্যোগ নেওয়া। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সেকারণে সরাসরি জোরালোভাবে যুক্ত করা। জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, টর্নেডো, সুনামি, বন্যা ইত্যাদির পূর্বাভাস গ্রহণ এবং তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নয়ন ঘটানো।
Date: 04/08/2021