একটি আশা জাগানিয়া রাষ্ট্র সুদান --- মুশফিক বরাত
October 4, 2021 at 7:52 pm,
No comments
সুদান হলো একটি বহুজাতিক, বহু সাংস্কৃতিক ও বহু ধর্মীয় বিভেদের দেশ। দীর্ঘ ৩০ বছর পর ইসলামিক রাষ্ট্রের পরিচয় মুছে ফেলছে দেশটি। উত্তর আফ্রিকার এই দেশটির ৯৭% মানুষই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। যার সূত্রপাত ঘটে ১৯৮৯ সালে। পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট একটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। তাদের একটি উন্নত বিপ্লবী দলও বলা চলে। তারা শুরু থেকেই সুদানকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিশেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। উমর আল বাশির নামের এক স্বৈরাচারী শাসক ক্ষমতা দখলের পর সুদান আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৮৯ সালে কর্নেল বাশির সামরিক কর্মকর্তাদের সমর্থন নিয়ে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটান। এই সামরিক অভ্যুত্থানের পর সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন ও ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি নিজেকে সুদানের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী ছিলেন তিনি নিজেই।
বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের স্বৈরাচারী এরশাদের মতো তিনিও স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট। পরবর্তীতে এই একনায়ক স্বৈরাচারী শাসকের কবলে পড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে দেশ। ঠিক এরপরই যা ঘটার তাই ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিশেবে ঘোষণা দেয়। পিএলএম (নর্থ) দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালিয়ে আসছিল। তারপরও এই সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যরা মৈত্রী সংগ্রামে সই করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। দেশের সাধারণ মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থন আছে পিএলএম-এর প্রতি। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা তাদের বিরোধিতা করে যেমন করে সুদান সরকারও।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী আবদালা হামদক ও পিএলএমের নেতা আজিজ আল হিলু।
একটা কথা সকলের জানা, ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু রাষ্ট্রের দায়িত্ব বর্তায় মুক্তচিন্তার পথে থাকা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হবার ফলে আন্তর্জাতিক সমর্থন বাড়বে আর দেশটিরও ভাবমূর্তি উন্নত হবে। কেননা নেপালের মতো দেশ এদিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। আর খুশির সংবাদ হলো এটাই যে, সশস্ত্র লড়াইয়ের সাময়িক অবসান ঘটলো।
গণতান্ত্রিক দেশ হতে গেলে সুদানকে যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রথমত, সব নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বাসের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় চর্চার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। রাষ্ট্র কোনো সরকারি ধর্মের ভার বহন করবেনা। ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্যও গ্রহণযোগ্য নয়।
পিএলএম-এন ও বিরোধী গ্রুপগুলোর সাথে সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয় পাশের দেশ দক্ষিণ সুদানের জুবাতে। চুক্তি অনুসারে, মন্ত্রিসভার ৩৫ শতাংশে বিদ্রোহীরা প্রতিনিধি দেবে যার মোট আসন সংখ্যা ৭৫। ৩০০ আসনের সংসদে সব পক্ষের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া চুক্তি অনুসারে দারফুরের মোট উপার্জনের ৪০ শতাংশ দারফুরের জনগণের জন্য বরাদ্দ ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২০ শতাংশ নিয়োগ সুবিধা দেওয়া হয়।
১৯৭০ সালে দারফুরে প্রথম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সেসময় বিদ্রোহীরা কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছিল। এর ফলশ্রুতিতে সরকার সামরিক বাহিনী মোতায়েন করলে দারফুরের কয়েক লক্ষ লোক পার্শ্ববর্তী দেশ শাদে আশ্রয় নেয়। বিদ্রোহের চব্বিশ বছর পর দারফুরে সরকারি বাহিনী বিজয় ঘোষণা করে। ২০০৬ সালে যেখানে শান্তিচুক্তি হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুদানকে চাপ দিচ্ছে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবার জন্যে। ১৯৯৩ সালে যখন নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে প্রথম সন্ত্রাসী হামলা চলে তখন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদতদাতা বলে চিহ্নিত করে।
এরপরই আসে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা। আন্তর্জাতিক চাপে বাধ্য হয়ে তারা তিন বছর পর ওসামা বিন লাদেন ও অন্যান্য জিহাদিদের বহিষ্কার করেছিল। ৯/১১-র পরে সুদানের গোয়েন্দা সংস্থা ও সিআইএ-র মধ্যে বন্ধুত্ব শুরু হয়। সুদান পৃথিবীর সবচেয়ে অন্তর্দ্বন্দ্ববহুল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জেনে রাখা উচিত যে, পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট একটি জাতীয়তাবাদী সশস্ত্র বিপ্লবী পার্টি।